কেমন ছিলেন আমাদের প্রিয় নায়ক সালমান শাহ?
বাংলা সিনেমায় ধূমকেতুর মত আগমন এক মহানায়কের নাম তার সালমান শাহ। আজকের প্রযুক্তির মত সে সময় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার থাকতো, তাহলে ভক্তরা সহজেই জানতে পারতেন তাদের 'স্বপ্নের নায়ক' সালমান শাহ কেমন ছিলেন। কী তাঁর প্রিয় খাবার, কোন শখ ছিল, কিংবা নতুন নতুন ছবি ও সেলফি দেখে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে পারতেন। ‘চেকইন’ দেখে বুঝতে পারতেন নায়ক কোথায় আছেন, কী করছেন।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্ম নেওয়া চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, বা সালমান শাহ, বেঁচে থাকলে আজ তার ৫৩ বছর পূর্ণ হতো। যদিও তিনি আমাদের মাঝে নেই, তবুও তার উপস্থিতি আমাদের মনে চিরকাল অমলিন। সালমান শাহ, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সবাইকে সম্মোহিত করেছিলেন, কিন্তু একা চলে গেছেন। তার না থাকার কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, আজ অনুরাগীরা প্রতিনিয়ত মনে করেন।
সালমান শাহ ড্রাইভিং খুব পছন্দ করতেন। কাজ শেষে প্রতি রাতে বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়তেন। বেশিরভাগ সময় কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য না থাকলেও, গন্তব্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি একটু জোরেই গাড়ি চালাতেন এবং রাতে গুলশানের একটি সাধারণ রেস্তোরাঁয় যেতেন, যেখানে মিল্কশেক তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এমনও হয়েছে, শুধু সালমানের জন্য রাত্রে দোকান খোলা রেখেছে দোকানদার। মিল্কশেক খেয়ে আড্ডা দেওয়ার পর, আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
উত্তরার ফুটপাতের একটি দোকানের চিতই পিঠা তার বিশেষ পছন্দ ছিল। একজন বয়স্ক নারী বানাতেন সেই পিঠা, এবং সালমান ও তার বন্ধুরা সেখানে প্রায়ই যেতেন। সালমান ওই নারীকে ‘নানি’ বলে সম্বোধন করতেন। এক বসায় তিনি ৯-১০টি পিঠা খেয়ে ফেলতেন এবং বিল দিতেন দামের চেয়ে অনেক বেশি। সে সময় টাকার পরিমাণ কম ছিল না, কিন্তু সালমান কোনো হিসাব রাখতেন না।
সালমান শাহ ছিলেন এক রকম পাগলাটে এবং একরোখা স্বভাবের ছেলে। তিনি খুব মিশুক ছিলেন, বড়-ছোট সবাইকে সহজেই আপন করে নিতেন। ছিলেন অত্যন্ত আদরকাতর এবং অনেক আবদার করতেন। লিটন এরশাদ একটি স্মৃতিচারণায় বলেন, এফডিসিতে একদিন শুটিং চলছিল যেখানে একটি চলন্ত গাড়িতে ঢুকতে হবে জানালার কাচ ভেঙে। পরিচালক বললেন, স্টান্টম্যান নেবেন। সালমান নিজেই দৃশ্যটি করতে জেদ ধরেন এবং এক শটেই তা সম্পন্ন করেন। আবার, একদিন তাকে ওপর থেকে লাফ দিতে হয়েছিল এবং সেখানেও স্টান্টম্যান না নিয়ে নিজেই লাফ দিলেন, ফলে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পেয়ে বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন।
আগুনের গাওয়া বহু গানে সালমান শাহ পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন। এক স্মৃতিচারণায় আগুন বলেন, “সালমান এফডিসিতে এক ধরনের আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি করতেন। এমনও হয়েছিল, একদিন এফডিসির গেটের পাশে সিকিউরিটির একজন বলেছিলেন তাদের টেলিভিশন নেই। পরদিনই সেখানে একটি টেলিভিশন চলে এল।”
স্টাইল আইকন হিসেবে সালমান শাহ
সালমান শাহ শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা ছিলেন না, তিনি স্টাইল আইকন হিসেবেও বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তার সময়ের ফ্যাশন ট্রেন্ডের পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত সালমান শাহের প্রতিটি লুক ছিল ত্রুটিহীন এবং অনুকরণীয়। তার সুদক্ষ ফ্যাশন সেন্স এবং অনন্য স্টাইল আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
সালমান শাহের আকর্ষণীয় পোশাক নির্বাচন, ত্বক ও চুলের প্রতি যত্ন এবং তার আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি তাকে একেবারে আলাদা করে তুলেছিল। তার জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে যেমন “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” বা “সুজন সখি”–এ তার স্টাইল আজও ফ্যাশন আইকন হিসেবে স্মরণীয়। অনেক বর্তমান তারকাও তার স্টাইল ও ফ্যাশন সেন্স অনুসরণ করেন। সালমান শাহের স্টাইল আজও আধুনিক ফ্যাশনের রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হয়।
সালমান শাহের জীবনের নানা দিক এবং তার ব্যক্তিত্ব আজও আমাদের হৃদয়ে অম্লান। তাঁর স্মৃতিকে আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই, এবং তার অনন্য অবদান চিরকাল আমাদের মনে থাকবে।
চির অম্লান হয়ে থাকবে আমাদের হৃদয়ে.......................
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন