মহাকাশে আটকে পড়া দুইজন নভোচারীর পেশি ও হাড়ের শক্তি ধিরে ধিরে কমে আসছে

মহাকাশে আটকে পড়া দুইজন নভোচারীর পেশি ও হাড়ের শক্তি ধিরে ধিরে কমে আসছে

মহাকাশে আটকা পড়েছেন দুই নভোচারী, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাদের দেশে ফিরে আসার কথা ছিল ১৫ দিনের মধ্যে, কিন্তু যানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তারা এখনো পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি। বর্তমানে, তাদের মহাকাশে আটকে থাকার সময় বেড়ে গিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারির আগে পৃথিবীতে ফেরার সম্ভাবনা নেই। ফলে, এই ছয় মাসের দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের মহাকাশে কিভাবে দিন কাটবে, সে বিষয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে।

সম্প্রতি জানা গেছে, নভোচারীদের শরীরের লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা দ্রুত কমছে। এর পাশাপাশি, তাদের পেশি ও হাড়ের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে সুনীতা ও বুচের। মহাকাশে অভিকর্ষের অভাবে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত কমে যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার মতে, দুই সপ্তাহের মধ্যে পেশির ঘনত্ব ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং ছয় মাসের মধ্যে তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, মহাকাশে থাকা অবস্থায় লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা দ্রুত কমে যায়, যা রক্তস্বল্পতার মতো শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে ২ লাখের পরিবর্তে ৩ লাখ লোহিত কণিকা ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে, সুনীতা ও বুচ আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশে আছেন এবং তাদের এই পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা দাবি করেছে যে, নভোচারীদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অক্সিজেন, খাবার, পানি এবং জামাকাপড় নিয়ে ইতিমধ্যেই কার্গো ফ্লাইট পাঠানো হয়েছে। নাসার সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে দুটি পণ্যবাহী মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে। প্রথম মহাকাশযানে রয়েছে ৮ হাজার ২০০ পাউন্ডের খাবার, পানি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র। দ্বিতীয় মহাকাশযানে রয়েছে তিন টন সামগ্রী। এছাড়া, মহাকাশ স্টেশনে এখন সুনীতাদের হাতেই ফলছে সবজি, ফলে খাবারের অভাব হবে না। মহাশূন্যে কৃষিকাজ নিয়ে সুনীতা এবং বুচ বর্তমানে গবেষণায় ব্যস্ত আছেন এবং কীভাবে আরও উন্নতভাবে ফসল ফলানো যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন।

নাসার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, মহাকাশ স্টেশনে তাদের জন্য একটি জিমও তৈরি করা হয়েছে। এই জিমে গিয়ে তারা হালকা ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করতে পারবেন, যা তাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ফলে, মহাকাশে থাকলেও তারা সুস্থভাবে থাকতে পারবেন।

এর আগে, ২০০৬ এবং ২০১২ সালে মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস। তার মোট ৩২২ দিন মহাকাশে কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। হাড় ও পেশির ক্ষয় রোধে, সুনীতা এবং বুচ প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করছেন। তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে চিকিত্সকরাও সচেষ্ট। নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী, সুনীতা এবং বুচ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমাচ্ছেন এবং তাদের ওজন যাতে কমে না যায়, সে জন্য পুষ্টিকর খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে, যদিও মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে কিছু শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সুনীতা এবং বুচ, তবে নাসার প্রচেষ্টার ফলে তারা সুস্থভাবে এবং কার্যকরীভাবে মহাকাশে অবস্থান করতে সক্ষম হচ্ছেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন