ঘূর্ণিঝড় শানশানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে জাপানের দক্ষিণাঞ্চল
ঘূর্ণিঝড় শানশান কি:-
ঘূর্ণিঝড় শানশান হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় যা ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট হয়। এটি মূলত একটি বিশাল আকারের আবহাওয়া সিস্টেম যা শক্তিশালী ঝড়ের আকারে রূপ নেয় এবং উচ্চ তীব্রতা এবং শক্তি নিয়ে ভূমির দিকে অগ্রসর হয়।
ঘূর্ণিঝড় শানশানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড জাপানের দক্ষিণাঞ্চল
জাপান সাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় শানশান প্রবল বিধ্বংসী শক্তি নিয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে আছড়ে পড়েছে। এই ঝড়ে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৯ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় শানশান জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ কিউশু’র কাগোশিমা শহরের উপকূলে আছড়ে পড়ে। তার আগে, কিউশু এবং আশপাশের অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। জাপানের আবহাওয়া দপ্তরের (জেএমএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কিউশু ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৬০০ মিলিমিটার।
কিউশু দ্বীপের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে মোট ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বর্তমানে দ্বীপটির প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকে।
আবহাওয়াগত কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, বেশকিছু উচ্চগতির ট্রেনের চলাচলও স্থগিত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় শানশানের কারণে কাগোশিমা ও পার্শ্ববর্তী মিয়াজাকি শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে, জানিয়েছে এনএইচকে।
ঘূর্ণিঝড় শানশানটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও প্রভাবের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:-
ঘূর্ণিঝড় শানশান সম্পর্কে সাধারণ ধারণা:-
নামকরণ: ঘূর্ণিঝড় শানশান নামটি চীনের সাংহাই প্রদেশের নামানুসারে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে এবং শানশানও সেই নিয়মের অংশ হিসেবে এই নাম পেয়েছে।
গঠন এবং উন্নয়ন: ঘূর্ণিঝড় শানশান সাধারণত গরম জলাশয়ের ওপর তৈরি হয়, যেখানে সাগরের উষ্ণ জল বাষ্পিত হয়ে বাতাসের মধ্যে প্রবাহিত হয় এবং এটি ঘূর্ণন শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় ঘূর্ণিঝড় শক্তি লাভ করে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পথ এবং প্রভাব: ঘূর্ণিঝড় শানশান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, এবং চীনের উপকূলীয় এলাকায় প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে সেই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি, ঝোড়ো বাতাস, এবং বন্যার আশঙ্কা থাকে।
সাবধানতা এবং প্রস্তুতি: ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ঘূর্ণিঝড় শানশান-এর প্রভাব:-
বৃষ্টি এবং বন্যা: ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারী বর্ষণ হতে পারে, যা বন্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং নদ-নদী উপচে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ঝোড়ো বাতাস: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের আশেপাশে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসের কারণে গাছপালা উপড়ে যেতে পারে, ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামোর ক্ষতি হতে পারে।
সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি: সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তটভূমি প্লাবিত হতে পারে, যার ফলে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় শানশান-এর প্রস্তুতি:-
সতর্কতা বার্তা: আবহাওয়া দপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিতভাবে সতর্কবার্তা প্রদান করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তুতি পরিকল্পনা: নিরাপদ আশ্রয় স্থল প্রস্তুত রাখা, জরুরি সরঞ্জাম সংগ্রহ করা, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।
সামাজিক সংহতি: ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে মানুষের সাহায্য এবং সহানুভূতি খুবই প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য।
ঘূর্ণিঝড় শানশান ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব মোকাবেলার জন্য সমন্বিত প্রস্তুতি এবং সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা, প্রস্তুতি, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন