প্রেমের গল্প-- শীতের রোদ

 


শীতের সকাল ছিল খুবই নীরব। সোনালী রোদ কাঁচের জানালা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, আর রুমের মধ্যে স্বস্তির উষ্ণতা নিয়ে এসেছিল। তৃষা এক কাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখ বন্ধ করে সূর্যের কোমল আলোর উষ্ণতা অনুভব করতে। কিন্তু তার মনে অন্য কিছু ছিল। প্রিয়জনের কথা, হারানো ভালোবাসার স্মৃতি।

একদিন আগে, তৃষার প্রিয় বন্ধু এবং প্রাক্তন প্রেমিক, রাহুল, ফিরেছে শহরে। দু’বছর পর, যখন তাদের সম্পর্ক শেষ হয়, তৃষা কখনোই ভাবেনি যে রাহুল আবার ফিরে আসবে। সেদিনের কথা মনে করে তৃষার হৃদয়ে এখনও এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছিল। তাদের সম্পর্ক ছিল মিষ্টি কিন্তু জটিল। দীর্ঘকাল একে অপরকে জানার পরও, তাদের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছিল।

রাহুল শহরে ফিরে এসেছে, এটা জানার পর তৃষা পুরোপুরি অস্বস্তিতে পড়েছে। তবে, মনে মনে তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাও ছিল। তাদের শেষ দেখা হয়েছিল এক হৃদয়বিদারক বিদায় নিয়ে। তারা তখনও তরুণ এবং আবেগপূর্ণ ছিল। আজ, এতগুলো বছর পর, তৃষা আর রাহুলের সম্পর্কের জটিলতা নিয়েও ভাবতে শুরু করেছে।

একদিন রাহুল ফোন করল। তৃষা কিছুটা নার্ভাস হলেও উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল। “তৃষা, তুমি কেমন আছো?” ফোনের ওপাশ থেকে রাহুলের কণ্ঠস্বর।

“আমি ভালো আছি। তুমি কেমন?” তৃষা সাধারন ভাবে উত্তর দিলো, যদিও তার মন ছিল একেবারে অন্য জায়গায়।

“মার্চে আমি শহরে আসছি, তুমি কি চাও তুমি এবং আমি এক কাপ কফি খেতে?” রাহুলের কণ্ঠস্বর ছিল প্রীতিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।

তৃষা কিছুক্ষণ চিন্তা করল। এর আগে তাদের দেখা হওয়া হয়নি, এবং সে জানতো যে তার হৃদয়ের কষ্ট এখনও তাজা। কিন্তু রাহুলের সান্নিধ্যে আবার একবার দেখা করতে আগ্রহী হয়ে উঠলো।

“ঠিক আছে,” তৃষা স্নিগ্ধভাবে উত্তর দিলো। “আমি মনে করি এটা ভাল হবে।”

মার্চে তৃষা এবং রাহুল একটি ছোট্ট ক্যাফেতে মিলিত হল। ক্যাফেটি ছিল শহরের এক কোণে, যেখানে একটি ছোট্ট বাগান ছিল। এটি যেন তাদের পুরনো স্মৃতির মতোই নীরব আর শান্ত। রাহুল এসেই তৃষার কাছে গিয়ে বসলো, তাদের পুরনো বন্ধুত্বপূর্ণ হাসির মতো হাসি নিয়ে।

“তুমি কেমন আছো?” রাহুল জিজ্ঞাসা করল।

“ভালো, তবে আমি ভাবছিলাম আমাদের সম্পর্ক শেষ হবার পর তুমি কী করছো?” তৃষা সরাসরি প্রশ্ন করল।

রাহুল কিছুক্ষণ নীরব থাকলো, তারপর বলল, “আমি অনেক পরিবর্তন করেছি। নতুন শহর, নতুন কাজ। তবে আমি আজও অনেক কিছু মনে করি, বিশেষ করে আমাদের স্মৃতিগুলো।”

“সত্যি বলতে, আমি কিন্তু আমাদের সম্পর্কের কথা ভুলতে পারিনি। অনেক কিছু মনে পড়ে,” তৃষা বলল, তার কণ্ঠস্বর একধরনের বিষণ্ণতায় ডুবে গিয়েছিল।

তারা ক্যাফের মধ্যে বসে থাকা সময়টা উপভোগ করতে লাগলো। পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো তাদের মাঝে কথা বলছিল, এবং তারা আবিষ্কার করল যে তারা একে অপরের জন্য এখনও অনুভব করে কিছুটা বিশেষ অনুভূতি।

“তুমি কি মনে করো আমরা আবার চেষ্টা করতে পারি?” রাহুল তৃষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার চোখে একটা গভীর আশা ছিল।

তৃষা কিছুক্ষণ নীরব থাকলো। তারপর সে আস্তে করে বলল, “আমরা কি আরেকটি সুযোগ দেবার মত পরিপক্ব? আমি জানি, অনেক কিছুই বদলে গেছে। আমাদের মধ্যে পুরনো বিষয়গুলো এখনও ঠিক করে নিতে হবে।”

“আমি জানি, কিন্তু আমি মনে করি আমরা যদি চেষ্টা না করি, তবে আমরা কখনোই জানবো না,” রাহুল বলল, তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিল।

তৃষার মনে হল যে রাহুল সঠিক কথা বলছে। তাদের সম্পর্কের জন্য, তাদের নিজেদের জন্য, তারা যদি চেষ্টা না করে তবে কিছুই জানা যাবে না। পুরনো স্মৃতিগুলো, পুরনো আবেগগুলো সব কিছু যেন আবার ফিরছে।

“তাহলে, আমি মনে করি, এটা চেষ্টা করার সময় এসেছে,” তৃষা বলল, তার কণ্ঠস্বর এখন আত্মবিশ্বাসী ছিল।

তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল। পুরনো স্মৃতির সাথে নতুন উষ্ণতা যুক্ত হয়েছিল, এবং তারা জানত যে তাদের নতুন পথচলা কতটা আশাবাদী হতে পারে।

অতীতের কষ্টের ছায়া ফেলে, তারা তাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকালো। নতুন করে একে অপরকে জানার চেষ্টা করল, এবং শীতের রোদ যেন তাদের নতুন পথচলার জন্য একটি সোনালী আশার বার্তা হয়ে দাঁড়ালো।


এই গল্পটি প্রেমের একটি মৌলিক রূপ, যা পুরনো সম্পর্কের পুনর্মিলন ও নতুন করে সম্পর্কের শুরু নিয়ে আলোচনা করে। আশা করি এটি আপনার মন পছন্দ হবে!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন